আবগারি শুল্ক (Excise Duty): একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ
আবগারি শুল্ক হলো সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট পণ্য, পরিষেবা বা কার্যক্রমের উৎপাদন, বিক্রয় বা ব্যবহারের ওপর প্রযোজ্য একটি পরোক্ষ কর। এটি মূলত ভোক্তাদের ওপর চূড়ান্ত বোঝা সৃষ্টি করে, যদিও প্রাথমিকভাবে উৎপাদক বা সেবাদাতারা এটি পরিশোধ করেন। বাংলাদেশে তামাক, জ্বালানি, বিলাসবহুল পণ্য এবং বিমান ভ্রমণের মতো ক্ষেত্রে এ শুল্ক প্রযোজ্য।
১. পরোক্ষ কর ব্যবস্থা
উৎপাদক/সেবাদাতা শুল্ক পরিশোধ করলেও মূল বোঝা ভোক্তার ওপর বর্তায়।
উদাহরণ: তামাক কোম্পানি শুল্ক দিলেও সিগারেটের দাম বাড়ে, যা ক্রেতাকে বহন করতে হয়।
২. পণ্য ও পরিষেবা-ভিত্তিক
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বা বিলাসী পণ্য: তামাক, মদ, জ্বালানি তেল, গাড়ি, প্রিমিয়াম সেবা (যেমন: ৫-স্টার হোটেল)।
সামাজিক উদ্দেশ্য: স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতিকর পণ্যে শুল্কের হার বেশি (যেমন: তামাকের ওপর ৩০০% শুল্ক)।
৩. রাজস্ব আহরণের গুরুত্বপূর্ণ উৎস
বাংলাদেশে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবগারি শুল্ক থেকে ৩২,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্য করা হয়েছে।
এই অর্থ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ হয়।
৪. মূল্যস্ফীতির প্রভাব
শুল্ক বৃদ্ধি সরাসরি পণ্যের মূল্য বাড়ায়।
উদাহরণ: জ্বালানিতে শুল্ক বৃদ্ধি → পরিবহন খরচ বৃদ্ধি → নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে।
তামাকজাত পণ্য: সিগারেট, বিড়ি, জর্দা (মোট রাজস্বের ৪৫% আসে তামাক থেকে)।
জ্বালানি: পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাস।
বিলাসবহুল পণ্য: উচ্চমূল্যের গাড়ি, আভিজাত্য সামগ্রী (যেমন: পারফিউম, লাক্সারি গ্যাজেট)।
পরিষেবা: বিমান টিকিট, হোটেল সেবা, মোবাইল ফোনের এয়ারটাইম।
সরকার বিমান ভ্রমণের টিকিটে আবগারি শুল্কের হার সংশোধন করে। নতুন হারসমূহ:
রুটের ধরন | পূর্ববর্তী শুল্ক (টাকা) | নতুন শুল্ক (টাকা) |
---|---|---|
অভ্যন্তরীণ | ৫০০ | ৭০০ |
সার্কভুক্ত দেশ (যেমন: ভারত, নেপাল) | ৫০০ | ১,০০০ |
এশিয়ার অন্যান্য দেশ (যেমন: সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া) | ২,০০০ | ২,৫০০ |
ইউরোপ/আমেরিকা | ৩,০০০ | ৪,০০০ |
ভোক্তাদের ওপর চাপ: ঢাকা-চট্টগ্রাম ফ্লাইটের টিকিট ১০% বেড়েছে।
ট্যুর অপারেটরদের নীতি: আর বি ট্যুরসের মতো সংস্থাগুলো শুল্ক বৃদ্ধির আগে কাটা টিকিটে অতিরিক্ত ফি নিচ্ছে না।
সরকারি রাজস্ব: বিমান খাত থেকে বছরে ১,২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত আয়ের লক্ষ্য।
মধ্যবিত্তের ওপর চাপ: বিমান ভ্রমণ এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বিলাসিতা হয়ে উঠছে।
পর্যটন শিল্পের উদ্বেগ: উচ্চ শুল্ক বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ কমাতে পারে।
স্বচ্ছতার অভাব: শুল্কের অর্থ কীভাবে ব্যয় হয়, তা নিয়ে জনসাধারণের জ্ঞানের অভাব।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মনোনিবেশ: ই-কমার্স সেবা (যেমন: ফুড ডেলিভারি) এবং অনলাইন সাবস্ক্রিপশনে আবগারি শুল্ক প্রসারিত করার পরিকল্পনা।
সামাজিক দায়বদ্ধতা: তামাক ও মদের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা।
আবগারি শুল্ক সরকারের রাজস্ব আদায়ের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, তবে এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব যাচাই করা জরুরি। ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় শুল্ক নীতির পাশাপাশি মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে বিমান টিকিটে শুল্ক বৃদ্ধি যেমন রাজস্ব বাড়াচ্ছে, তেমনি ভ্রমণ খরচ বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে।