হজের দোয়া: আত্মার পরিশুদ্ধি ও মহান রবের নৈকট্য লাভের মাধ্যম
হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। এটি শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানই নয়, বরং আত্মার পরিশুদ্ধি, তাওবা এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহাসুযোগ। হজের প্রতিটি ধাপে নির্দিষ্ট দোয়া ও জিকির রয়েছে, যা হাজীদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত থেকে প্রমাণিত। এই ব্লগে হজের গুরুত্বপূর্ণ দোয়াগুলো বাংলা অনুবাদ ও সরল ব্যাখ্যাসহ উপস্থাপন করা হলো।
কুরআন ও হাদিসে হজের সময় দোয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
"আর মানুষের জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করা ফরজ... যে সেখানে প্রবেশ করে, সে নিরাপত্তার সাথে প্রবেশ করবে।" (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)
রাসূল (সা.) বলেছেন, "হজে মাবরুরের (গ্রহণযোগ্য হজ) একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত।" (বুখারি)
এই সওয়াব লাভে হজের প্রতিটি আমলের সাথে দোয়া ও মুনাজাতের ভূমিকা অপরিসীম।
আরবি: لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لَا شَرِيكَ لَكَ
বাংলা উচ্চারণ: "লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।"
অর্থ: "হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিলাম। আপনার কোনো শরিক নেই। সকল প্রশংসা, নিয়ামত ও রাজত্ব শুধু আপনারই।"
মাহাত্ম্য: এই তালবিয়া হজের মূল নিদর্শন। এটি ইহরাম থেকে শুরু করে কঙ্কর নিক্ষেপ পর্যন্ত বারবার পড়তে হয়।
তাওয়াফের সময় রুকনে ইয়ামেনি (কাবাের দক্ষিণ কোণ) স্পর্শ করে বা ইশারা করে এই দোয়া পড়ুন:
আরবি: رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
বাংলা উচ্চারণ: "রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া কিনা আজাবান নার।"
অর্থ: "হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দিন এবং আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।" (সুরা আল-বাকারা: ২০১)
সাফা পাহাড়ে উঠে কাবার দিকে মুখ করে তিনবার "আল্লাহু আকবার" বলুন এবং এই দোয়া পাঠ করুন:
আরবি: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، يُحْيِي وَيُمِيتُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
বাংলা অর্থ: "আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। সমস্ত রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁরই। তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান, এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।"
আরাফার দিনে রাসূল (সা.) বলেছেন, "সর্বোত্তম দোয়া হলো আরাফার দিনের দোয়া।" (তিরমিজি)
এ সময় বেশি বেশি এই দোয়া পড়ুন:
আরবি: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অর্থ: "আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। সকল রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁরই, এবং তিনি সবকিছু করতে সক্ষম।"
মুজদালিফায় থাকাকালীন রাত জেগে ইস্তিগফার ও এই দোয়া পড়ুন:
আরবি: رَبِّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي
বাংলা অর্থ: "হে রব! আমাকে ক্ষমা করুন, রহম করুন, সঠিক পথ দেখান, সুস্থ রাখুন ও রিজিক দিন।"
গুনাহ মাফ: রাসূল (সা.) বলেন, "যে ব্যক্তি হজ করল এবং অশ্লীলতা ও পাপাচার থেকে বিরত থাকল, সে নবজাতকের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে।" (বুখারি)
দুঃখ-কষ্টের প্রতিকার: হজের কঠিন পরিশ্রমে ধৈর্য ধরে দোয়া করলে আল্লাহ দুঃখ দূর করেন।
পরিবারের জন্য সওয়াব: হাজী তার পরিবার-পরিজনের জন্যও দোয়া করতে পারেন।
১. দোয়ার আগে আল্লাহর প্রশংসা করুন: যেমন, "আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন" দিয়ে শুরু করুন।
২. নামাজের সময় দোয়া কবুল হয়: বিশেষত ফজর ও আসরের পর।
৩. কান্নাভরা অন্তরে দোয়া করুন: আল্লাহ বলেন, "আমি বান্দার দোয়ার কাছে সাড়া দেই যখন সে আমার কাছে প্রার্থনা করে।" (সুরা আল-বাকারা: ১৮৬)
৪. দোয়ায় বিশ্বাস রাখুন: আল্লাহর রহমতের প্রতি আস্থা রেখে বারবার চেষ্টা করুন।
হজের দোয়া শুধু কিছু শব্দের পুনরাবৃত্তি নয়, বরং এটি হাজীর হৃদয়ের আকুতি ও আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম। এই দোয়াগুলো যদি ইখলাসের সাথে পড়া হয়, তবে ইনশাআল্লাহ তা কবুল হবে এবং হজ হবে মাবরুর। সকল হাজী ভাই-বোনদের জন্য রইল ফরিয়াদ:
"হে আল্লাহ! আমাদের হজ কবুল করুন, আমাদের গুনাহ মাফ করুন এবং আমাদেরকে আপনার নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন!"